মানিকগঞ্জ জেলার অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি সদর বাসস্ট্যান্ড এলাকা। যেটি একসময় ছিল চাঁদাবাজির অভয়ারণ্য। এখন সুশাসনের ছোঁয়ায় হয়ে উঠেছে ব্যবসাবান্ধব এলাকা। বাসস্ট্যান্ডকে ঘিরে গড়ে ওঠা পরিবহন, হোটেল-রেস্তোরা ও ফুটপাতের শত শত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হয়েছে আজ চাঁদামুক্ত। হাঁপ ছেড়ে বাঁচছে ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয়রা বলছেন, এক সময়ের দাপুটে আওয়ামী সরকারের আমলে সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেকের প্রত্যক্ষ ছত্র-ছায়ায় এই ব্যবসা কেন্দ্র থেকে তোলা হতো বিপুল অঙ্কের চাঁদা। তা ছিল ওপেন সিক্রেট। তার খলিফারা হয়ে উঠেছিল কোটি টাকার মালিক। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে আওয়ামী সরকারের পতনের পর গা ঢাকা দেয় চাঁদাবাজ চক্র। বর্তমানে জেলা বিএনপি ও পুলিশ প্রশাসনের জিরো টলারেন্স নীতিতে এই অবস্থা রীতিমতো বদলে গেছে। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আফরোজা খান রিতার দৃঢ় অবস্থান এবং পুলিশ প্রশাসনের কার্যকর নজরদারিতে চাঁদাবাজরা নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারছে না।
পরিবহন ব্যবসায়ী ও চালকরা জানাচ্ছেন, আগে আয়ের সিংহভাগই চলে যেত চাঁদায়। এখন কেবল পৌর টার্মিনাল চার্জ দিলেই ব্যবসা চালানো যাচ্ছে লাভে।
কয়েকজন হকার ও অন্যান্য ব্যবসায়ী বলেন, আওয়ামী লীগের সময় চাঁদা দিতে দিতে নিঃস্ব হয়েছিলাম। এখন ছেলে-মেয়েদের নিয়ে শান্তিতে ডালভাত খেতে পারছি। তবে এই অবস্থাই যেন থাকে। আগের রুপে যেন আর না ফিরে। ভয়ও লাগে কারণ শোনা যায় অনেক জায়গায় শুধু পাল্টেছে মানুষ, দল আর চাঁদার ধরণ। সেই সঙ্গে বেড়েছে চাঁদার পরিমাণও। তাই রাজনৈতিক দল ও প্রশাসন যেন এই দিকটা একটু সুদৃষ্টি রাখে তার দাবিও জানান।
পৌর বাস টার্মিনালের ইজারাদার ও জেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক লিটন জানান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আফরোজা খান রিতা ও পুলিশ প্রশাসনের কঠোর নির্দেশনা অনুযায়ী পরিবহন থেকে শুধুমাত্র পৌর পার্কিং চার্জ নেওয়া হচ্ছে। এরপরও বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের একটি কুচক্রী মহল তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিগত সরকারের আমলে যারা ইজারা নিয়েছিল তারা জোড় করে অবৈধভাবে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হতো। যা ছিল পরিবহন ব্যবসায়ীদের জন্য কষ্টদায়ক।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর মানিকগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাস বলেন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আফরোজা খান রিতা অত্যন্ত বিচক্ষণ নেত্রী। তার নেতৃত্বে প্রশাসন ও দল একসঙ্গে কাজ করায় চাঁদাবাজরা আর ফিরে আসতে পারছে না।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আফরোজা খান রিতা বলেন, “মানিকগঞ্জে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও দখলবাজির কোনো স্থান নেই। এই জেলা আমাদের গর্ব, এখানকার মানুষ শান্তিপ্রিয় ও পরিশ্রমী। আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই—পরিবহন খাতে চাঁদাবাজির নামে কেউ যদি সাধারণ মানুষের ঘাম ঝরানো উপার্জনে ভাগ বসাতে চায়, তার বিরুদ্ধে আমরা কঠোর অবস্থান নেব।
আমাদের রাজনীতি হলো জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার রাজনীতি—লুটপাট নয়, ভয়ভীতি নয়। ব্যবসায়ীরা যেন নিশ্চিন্তে তাদের কাজ করতে পারেন, সাধারণ মানুষ যেন নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারেন—এই পরিবেশ নিশ্চিত করাই আমাদের অঙ্গীকার।
দলীয় পরিচয়ের আড়ালে কেউ যদি অনিয়মে লিপ্ত হয়, তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমি সকল ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষকে আহ্বান জানাই—আপনাদের যদি কেউ চাঁদা দাবি করে, তা সে যেই হোক, তাকে আইনের হাতে তুলে দিন। আমরা পাশে থাকব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং উন্নত একটি মানিকগঞ্জ গড়তে আমাদের এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।”
পুলিশ সুপার মোসাম্মৎ ইয়াছমিন খাতুন বলেন, মানিকগঞ্জে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আমরা এক বিন্দু ছাড় দিচ্ছি না। সদর বাসস্ট্যান্ড এলাকার চাঁদাবাজদের গতিবিধি আমরা নজরে রেখেছি। কেউ চাঁদা তোলার চেষ্টা করলেই তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা জনগণের পাশে আছি ও থাকবো। শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও চাঁদামুক্ত পরিবেশ বজায় রাখতে যা যা করার দরকার পুলিশ প্রশাসন সবটাই করবে।